" এই দাদা,আমার পি"রিয়ড হচ্ছে।আসার সময় চকলেট কিনে আনিস তো! "


শুভ্রার কথা শুনে পাশ থেকে মা গম্ভীর স্বরে বললো " শুভ্রা,এতো বে"য়াদব কবে হলি? ভাইয়ের সাথে এসব কি নিয়ে কেউ কথা বলে? "


চোখ ইশারায় শুভ্রাকে চুপ থাকতে বললাম।শুধু মা না,শুভ্রা আর আমার মধ্যে এমন সহজ ভঙ্গিতে কথা বলাটা এলাকার অনেকেই বাজেভাবে উপস্থাপন করে।


কলেজ শেষে চকলেট কিনে আসলাম।শুভ্রা বললো 


" দাদ, মা তখন রাগ করলো কেন? তোকে বলেছি এখানে রাগার কি আছে? "


" আরে বাদ দে তো।তুই চকলেট খা।আর কিছু লাগলে আমায় বলবি।একদম লজ্জা পাবি না।লোকে কি বলে বলুক,সবসময় মনে রাখবি আমি তোর কাছের মানুষ। কাছের মানুষকে সব বলা যায় "


এর কিছুদিন পর এক রাতে শুভ্রা এসে ফিসফিস করে  বললো 

" দাদা,আমাদের পাড়ার সৈকত নামে একটা ছেলে আছে না? উনি আমায় আজ প্রপোজাল দিছে "


" বাহ্ ভালো তো।তুই কি করলি?এক্সেপ্ট করছিস? "


" বলেছি আগে তোর সাথে কথা বলবো তারপর উত্তর দিবো।কি করবো দাদা? "


" ছেলেটাকে তোর পছন্দ? "


" প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকতো,এসব দেখে হালকা অনুভূতি কাজ করছে "


" ওই ছেলে এখনো কলেজ পেরোয়নি।ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার কি হবে কেউ জানিনা।তোর জন্য এখন ছেলে দেখা শুরু করলে ব্রাইট ফিউচারের ছেলে পাওয়া সম্ভব, যার সাথে তুই সারাজীবন স্বচ্ছলভাবে থাকতে পারবি।টাকার চিন্তা থাকবে না।আর যদি তোর মনে হয় সৈকত ছেলেটার নরমাল ক্যারিয়ার হলেও মানিয়ে নিয়ে চলতে পারবি,টাকার কষ্ট সহ্য করে সংসার করতে পারবি তাহলে আমি বলবো এক্সেপ্ট কর "


" তাহলে না করে দিই, কি বলো?" 


" আচ্ছা "


শুভ্রা চলে যাওয়ার ঘন্টাখানেক পর মা গম্ভীর মুখে ঘরো ঢুকে বললো " শুভ্রার সাথে একটা ছেলের গভীর সম্পর্ক।রাতে ফোনে ফিসফিস করে কথা বলে "


আগ্রহ নিয়ে বললাম " ভালোই তো "


" এখানে ভালোর কি দেখলি?চা"পকে ওর পি"ঠের ছা"ল আমি তুলে ফেলবো।এইটুকু বয়সে প্রেম? "


" বেশ তো।যাও মা"রো "


মা এলোমেলো স্বরে বললো " তুই তো জানিস শুভ্রা জেদি মেয়ে।রাগারাগি করলে আবার উল্টোপাল্টা কিছু করে ফেলবে। তুই গিয়ে একটু বুঝা "


" আমি বোঝাবো কিভাবে! "


" কিভাবে সেটা তুই ভালো জানিস।ও তো সব কথা তোকে বলে "


" সব কথা আমায় বলে অথচ তোমাদের বলার সাহস পায় না কেন একবার ভেবেছো? "


মা ইতস্তত করে বললো " সেটা আমি কিভাবে বলবো! "


" কারণ আমি ওকে তোমাদের মতো শাসনে রাখিনা।তুমি যা বললে সেটা নিয়ে একটু আগে শুভ্রার সাথে আমার কথা হয়েছে।ও আর ওই ছেলেকে সময় দিবে না।এখন বুঝেছো তো কেন এতো ফ্রী ভাবে ওর সাথে মিশি? তোমাদের মতো আমাকেও যদি ও ভয় পেতো তাহলে বিষয়টা আমার সাথে শেয়ার করতো?কখনোই না।একসময় দেখা যেত তোমরা ওকে মা"রধর করতা।তখন ও আরো বিগড়ে যেতো।ছোট মনে হাজারো বাজে চিন্তা আসতো,পরিবারকে আরো ভয় পেত,অসহ্য লাগতো।এমন ও হতো যে ছেলেটার সাথে পালিয়েও যেতে পারতো।এখনকার মেয়েরা কেন নষ্ট হয় জানো? তোমাদের মতো বাবা মায়ের জন্য। যারা মেয়েকে সবসময় জেলের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখো।তাদের মনের কথা একবার বুঝতে চেষ্টা করো না।সেদিন শুভ্রা পি"রিয়ডের কথা বললো জন্য তুমি রাগ দেখাইলা,অথচ শুভ্রার পি"রিয়ডের ব্যাথায় যখন সারারাত ছটফট করে,কান্না করে তখন আমি রাত জেগে গরম জল হ"টব্যাগে ভরে ওর ঘরে দিয়ে আসি।একটু পরপর গিয়ে শুনি ব্যাথা কমেছে কিনা।এসব করা কি আমার ভুল?এখানে লজ্জার কি আছে আমি তো বুঝিনা।সময় পাল্টেছে মা।এসবে কিসের লজ্জা? কাছের মানুষদের যদি নিজের অসুস্থতার কথা বলতে না পারে তাহলে কার কাছে বলবে? তোমরা যাই বলো,সমাজ যাই বলুক,আমার বোনের খেয়াল আমি সবসময় রাখবো।আমার বোন পৃথিবীর সবাইকে ভয় পেলেও যেন আমার বু"কে আশ্রয় পায়, এমন একজন দাদা হয়ে দেখাবো "


গল্প একজন_দাদা


জয়ন্ত_কুমার_জয়