ফুলের ঘ্রানে মোহ মোহ করা রুম এ একহাত ঘোমটা টেনে বসে আছি,  আমার স্বামীর অপেক্ষা তে, হ্যা! ঠিক ভেবেছেন আজ আমার বাসর রাত। প্রতিটি নারীর জন্য আজকের রাত কতোটা মূল্যবান তা তো জানেন ই, আমি আমার স্বামীকে দেখেনি বিয়ের আগে কিছু ই জানিনা তার ব্যাপারে। ২ দিন আগে ২ মহিলা আমায় দেখতে আসে একজন তার মা আর একজন সম্ভবত উনার চাচী আর তারা আমায় পছন্দ করে। আব্বা বলল ২ দিন পর ই নাকি বিয়ে। আমার মত থাকলেও বিয়ে হবে না থাকলেও  হবে। উনি যা বলেছেন তা ই হবে। তাই আমিও ভাবলাম যে বিয়ে তো হবে ই এইখানে আর দেখে কথা বলে লাভ কি? একবারে বিয়ের পর ই নয় কথা হবে সব জানবো তার ব্যাপার এ হঠাৎ ঘড়ির ডিং ঢং শব্দে ভাবনার জগৎ থেকে বের হলাম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১ টার কাটা ছুই ছুই করছে। ওহো আমার পরিচয় তো দিলাম না আমি আয়রা, ইন্টার পাস আমি এরপর আমাকে আর বাসা থেকে পড়তে দেয় নি আব্বু আর ভাইরা। চেয়েছিলাম অনেক পড়তে তবে তারা দেয় নি আর কি বাসার সকল রকমের কাজ শিখেছি বয়স আমার ২১ ছুই ছুই, আমার ২ ভাই, বাবা, মা আছেন আর স্বামীর বাড়িতে শশুর, শাশুড়ী,  ১ টা ননদ আর ১ টা দেবর আর আমার স্বামী আমি আর জানি না আসলে। আবার  ভাবতে লাগলাম উনি কি আসবেন না? 

নাটক, গল্প, সিনেমা তে দেখতাম বাসর রাতে স্বামী এসে বলতো সে নাকি অন্যকাউকে ভালোবাসে বা সে এই বিয়ে মানবে না আরো কতো কি হেন, তেন ভাতের ফেন এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে এলো বুঝলাম ই না।

হঠাৎ  করো নরম আওয়াজের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গায় অন্ধকার এ উনার চেহারা না বুঝার কারনে আমি" আল্লাহ গো ভূত! ভূত!" বলে দিলাম এক চিৎকার। তখনি উনি বলে উঠলেন 


আরে আরে করছো টা কি? আমি তো। ভয় পাচ্ছো কেন? আসলে কারেন্ট চলে গিয়েছে জেনারেটর টা ঠিক করাতে পারলাম না আসলে লোক নেই এখন এই একটু পর ই হয়তো কারেন্ট চলে আসবে। আমি মোবাইলের লাইট দিয়ে দেখলাম তোমায় তুমি ঘুমাচ্ছো তাই তুমি জাগার পর লাইট অফ করে দিলাম। যদি বুঝতাম তুমি এমন ভয় পাবে তাহলে কখন ই মোবাইলের লাইট টা বন্ধ করতাম না।


বলে ই উনি হা হা করে হাসি দিলেন এক। যদিও বা হাসি টা দেখতে পারি নি তবে কেন জানি দেখার বড্ড কৌতুহল হচ্ছিলো। তখনি উনি আবার বলে উঠলেন,


আচ্ছা তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও এই শাড়ী আর গহনা নিয়ে আর কতোক্ষন ধরে বসে আছো। 


জি!! যাচ্ছি কিন্তু??.


কিন্ত কি??অন্ধকার নিয়ে ভাবছো..? আমার ফোন এর টর্চ লাইট দিয়ে কাজ হবে না?? 


জি!! হবে। 

এরপর উনার মোবাইল এর টর্চ লাইট দিয়ে শাড়ী নিলাম একটা আর সব গহনা খুলে বাথরুমে গিয়ে সব চেঞ্জ করলাম,  মুখের মেকআপ সব ধুয়ে বের হলাম আর কারেন্ট চলে আসলো। তখনি উনার মুখটা আমি দেখতে পারলাম, শ্যমবর্ণ উনার গায়ের রং তবে মুখটা অসম্ভব মায়াবী,  চক্ষু দুটো খুব ই সুন্দর বলে না হরিণ চোখ ঠিক তমনি, মাথায় অতো বেশি চুল কিনা বুঝছি না তবে হ্যা, মাথার চুল গুলো উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে,  মুখে খোচা খোচা দাঁড়ি, মনে হচ্ছে দাঁড়ি গুলো তার সৌন্দর্য কে আরে বাড়িয়ে তুলেছে। হঠাৎ উনার ডাকে আমার হুশ হলো।  উনি আমার কানের কাছে এসে বললেন 


আমাকে তো পরে ও দেখতে পারবেন বা একটু পর ই খাটে বসে আরামসে দেখতে পারবেন এইভাবে তাকিয়ে না থেকে যান হাত, মুখ মুছে নেন। 


আমি উনার কথায় অসম্ভব পরিমান এ লজ্জা পেয়েছিলাম।  লজ্জায় আমার মুখ দিয়ে কথা ই বের হচ্ছিল না। আমি অন্যপাশে গিয়ে মুখ মুছে আগের ন্যায় বিছানা তে বসার আগে উনাকে বললাম, শুনেন?? আপনার ফোন।  উনি ধুরুম ধুরুম করে পায়ে আমার কাছে এসে বললেন


 "শুনেন কে?? "


আমি আমতা আমতা করে বললাম মানি মানি,  পরক্ষনে ই বললেন যে, 


আমাকে এই যে,  শুনেন এইসব বলবে না। আমাকে তুমি সাইদ ই বলবে, আমাকে যেহেতু সাইদ বলে কেউ ডাকে না তাই এটা ই বলবে তুমি ওকে?? এছাড়া ও তুমি আমায় ওগো শুনছো ও বলতে পারো।


কথা টা বলে উনি এক মুচকি হাসি দিলেন হাসি টা ছিলো গুলি ছাড়া ঘায়েল করা হাসি।উনি আবার বলে উঠলেন 


 আচ্ছা বাসর ঘর এর নিয়ম নাকি বউ ঘোমটা দিয়ে বসবে আর জামাই ঘোমটা তুলে কিছু একটা বলবে তাই না? তা তো হলো না, তুমি তো ঘুমিয়ে গিয়েছিলে,


উনি কথাটা বলার সময় উনার মুখে স্পষ্ট দুঃখের ভাব ছিলো, তাই আমি বললাম, আপনি আবার আসেন আমি ঘোমটা টেনে বসছি।এরপর আপনি আসুন তাহলেও তো হয়। চলবে না আপনার??


আরে আরে এতো দৌড়াবে দারাও দারাও আমি আসি। 


আমি ঘোমটা দিয়ে বসলাম, তারপর উনি এলেন আমার ঘোমটা তুলে বললেন,


চন্দ্র,সূর্য মুখী। সবসময় এই আলেকিত চেহারার ন্যয় আমাদের সংসার কে আলোকিত রেখো। এরপর আমি উনাকে সালাম করলাম। উনি আমায় মিষ্টি খাইয়ে দিলেন আমি অল্প খেলাম আর উনি ঐ মিষ্টিটাই পুরাটা খেলেন।


জানো?? বাসর রাতে স্বামী স্ত্রী কে কিছু দেয়৷ 


আমি মাথা নাড়ালাম যে না,


উনি আলমারি থেকে ১ টা ব্যাগ বের করে আমায় দিলেন। আর দিয়ে বললেন এটা তেমার জন্য খুলে দেখো পছন্দ হয় কিনা? 


আমি ব্যাগ এ দেখি ১ টা বক্স তা খুলে দেখি ১ টা মোবাইল ভালো ই বড় সর এক স্মার্ট মোবাইল।  আমি বললাম এটা কার? 


এটা তোমার জন্য। তোমার সাথে কথা বললো আমি এই ফোন এর মাধ্যমে।  আমি বিয়ের আগে শুনেছি তোমার নাকি ফোন নেই। তাই এটা নেওয়া।


আমি তো আপনার জন্য কিছু আনি নি,


তো কি হয়েছে তুমি আমার পাশে সবসময়  থাকলে ই হবে। চলো বারান্দায় যাই। কথা বলি ঐ খানে।


আচ্ছা। বারান্দায় গিয়ে দেখি বারান্দা টা অসম্ভব পরিমান এ সুন্দর গাছে ভরা বারান্দায় মাঝের জায়াগায় ২ জন এর ১ টা সোফা আমি আর উনি বসে বসে গল্প করছিলাম। আসলে উনিই কথা বলছিলেন আমি মুগ্ধ নয়ণে তাকিয়ে ছিলাম আর শুনছিলাম আর ভাবছিলাম যে এই এতো দামী ফোন আমি আমার কাছে রাখতে পারবো তো? আসলে এমন দামী ফোন কখন ও আমার হবে ভাবিনী,  দেখেছি ওতো দামী মোবাইল তবে ভাইদের হাতে আমাকে কেউ কখনও কারো ফোন ধরতে ও দেয় নি আর কিনে ও দেয় নি। আব্বা, ভাইদের মতে মেয়ে মানুষ ফোন না ব্যবহার করা ই ভালো। এইসব সাত, পাঁচ ভাবিছিলাম আর উনার সব কথা শুনছিলাম।


চলবে


🍁🍁প্রাপ্তি🍁🍁

লেখক_অদরিজা_রহমান

পর্ব-১


[আসসালামু আলাইকুম। 

নতুন কিছু নিয়ে হাজির হলাম আপনাদের ভালো সাড়া পেলে  পরবর্তী পর্ব দিবো। সবাই ভালো থাকবেন।]